নিজস্ব প্রতিবেদক : গত কয়েকদিন থেকেই বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহের বাসিন্দরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন।
জানা গেছে,বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট বর্ধিত না করার দাবিতে ময়মনসিংহে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন, উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ ও গৌরীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠন ‘এসো গৌরীপুর গড়ি’ এর আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছেন ময়মনসিংহবাসী।
এদিকে ময়মনসিংহবাসীর এমন প্রতিবাদী সমাবেশ করায় জামালপুরে সচেতন নাগরিকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জামালপুরবাসীরা।ফেসবুকে অনেকেই দাবি করছেন জামালপুরে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করার কিংবা জামালপুরকে অন্যজনের সাথে যুক্ত করে বিভাগ ঘোষণা করার দাবী করেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে,’শীত কালে যাত্রীদের চলাচলে সুবিধা নিশ্চিত করতে, নতুন ট্রেন পরিচালনা এবং আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী নভেম্বর থেকে নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী নভেম্বর থেকে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রাম ছাড়বে সকাল ৯টায় ছাড়বে, জামালপুর পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। ফিরতি যাত্রায় জামালপুর ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে, চট্টগ্রাম পৌঁছাবে সকাল ৪ টা ২০ মিনিটে। বর্তমানে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। ট্রেনটির রুট বর্ধিত করে করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাস থেকে ট্রেনটি জামালপুর- ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করার কথা রয়েছে।
গত বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ ও শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এসো গৌরীপুর গড়ি’ আয়োজনে ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচলকারী আন্ত:নগর ট্রেন বিজয় এক্সপ্রেস এর স্টেশন পরিবর্তন করে জামালপুর থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবীতে প্রতিবাদী সমাবেশ করেন ময়মনসিংহবাসী। প্রতিবাদী সমাবেশের আহ্বান করেন, এডভোকেট এ এইচ এম খালেকুজ্জামান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমীন কালাম।
এদিকে গত বুধবার রাতে ময়মনসিংহে প্রতিবাদী সমাবেশের খবর প্রকাশের পরে জামালপুরবাসী ফেসবুকে সমালোচনা শুরু করেন। ময়মনসিংহে এমন প্রতিবাদী সমাবেশ করায় জামালপুরে সচেতন নাগরিকেরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেন।
জামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী তিনি ফেসবুকে লেখেন,’ এ কেমন হীনতা! এ কেমন সংকীর্ণতা! বিজয় ট্রেন বাতিল হয়নি, রাষ্ট্রীয় সেবাখাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে কেবল সেবার পরিধি বাড়িয়েছে! ময়মনসিংহের পরিবর্তে জামালপুরকে যাত্রারম্ভের স্টেশন নির্ধারণ করেছে। এতেই ‘সব হারানোর বেদনা’য় কাতর ময়মনসিংহবাসী আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন! এই খবর শুনে, তাদের এহেন কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার পরিচয় পেয়ে আমরা বিস্মিত হতেও লজ্জা পাচ্ছি। অনুধাবন করতে পারছি, বিভাগ পেয়ে তারা যেন ‘বড়ভাই’ হয়ে গেছেন। এমনিতেই ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জামালপুরসহ অপরাপর জেলা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। তার উপর ময়মনসিংহবাসীর এই ধরনের পরশ্রীকাতরতা আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবার উপলক্ষ এনে দিয়েছে। আমরা আজ বুঝতে পারছি, ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুরুত্বপূর্ণ জেলা কিশোরগঞ্জের ‘না’ ছিলো অত্যন্ত যৌক্তিক।
আমরা দাবি করছি, অন্তত ৫০ ভাগ বিভাগীয় কার্যালয় জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা জেলায় স্থাপন করতে হবে। নইলে ময়মনসিংহ বিভাগের পরিবর্তে জামালপুর জেলাকে রাজধানী ঢাকা বিভাগের সাথে পুনরায় সংযুক্তির দাবি উত্থাপিত হওয়া সময়ের অপেক্ষামাত্র। একই সঙ্গে আশা করি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ময়মনসিংহবাসী তাদের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন,’এটা কেমন প্রতিবাদ..! ? জামালপুর তো ময়মনসিংহ বিভাগেরই অংশ, এছাড়া এমন তো নয় যে বিজয় ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে না থেমে জামালপুর থেকে সো—জা— চট্টগ্রাম চলে যাবে! জনসাধারণের সেবা দানের প্রয়াশে এর গতিপথ শুধু মাত্র জামালপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়ছে। এইসব সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে বরং আসুন সবাই মিলে আওয়াজ তুলি যত শীগ্র সম্ভব আমাদের কে সিলেট যাওয়ার জন্য একটা ট্রেন দিতে হবে! জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ময়মনসিংহ- আমরা সবাই মৈমনসিংয়া…….একসাথে হাসি, একসাথে বাঁচি একসাথে থাকবো- সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই। সবার জন্য শুভকামনা।
এদিকে জামালপুরের ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও সচেতন নাগরিকরা ময়মনসিংহবাসী এমন প্রতিবাদী সমাবেশ করায় খুব প্রকাশ করছেন এবং জামালপুর কে ঢাকা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি করেন।
জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা মো. আছাদ মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন,’বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি কবে থেকে জামালপুর স্টেশন চট্টগ্রামে চলাচল করবে এই বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত রেলওয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোন চিঠি পাইনি।